মোটু দ্যা ইটিং ডিজ অর্ডার
"
গল্প: মোটু দ্যা ইটিং ডিজ অর্ডার
লেখক: জি আর সুমন
প্রতিকি ছবি: মটু দা ডিজ অর্ডার, ঝরে গেল যে কারণে মটুর প্রাণ |
"রূপপুর নামের এক গ্রামে কামাল নামের এক ব্যবসায়ী স্ত্রী মনিষা ও একমাত্র ছেলে সামিনকে নিয়ে বেশ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো। সোহান কে ছোটো থেকে খুব আদর স্নেহ দিয়েই ওর বাবা মা বড় করেছে। সামিন ও ওর বাবা-মাকে খুব ভালোবাসতো! সামিন ছোট থেকেই খেতে ভালোবাসতো! আর মনিষাও নিজের ছেলের পছন্দের সব খাবার রান্না করে ছেলেকে খাওয়াতো।"
১ম দৃশ্য:
ছেলে মনের আয়েশে খাচেছ….।
বর্ষা: সব ভাত তো তোকেই খেতে দিলাম, আর একটুখানি, ভাত হাড়ির তলায় পড়ে আছে…. । নে…. হাত ধুয়ে .. দোকানে যা…. তোর বাপকে খাবারটুকু দিয়ে আয় গা…। রাতে বেশি করে খাস…।
ছেলে: ঠিক আছে মা।,.. বলে… প্লেট এর তলা চাটবে..।
প্রতিবেশী: ভাবী…. বিপদে পরে এলাম
উনূনে তরকারী চাপিয়ে দেখি লবণ শেস…. এক
মুঠো লবণ … ধার দাও তো… ( বলে সামিনের সামনে এসে অন্য রকম ভাবে তাকাবে)..
প্রতিবেশীঃ হ্যাঁ গো ভাবি! ছেলেকেই শুধু খাওয়াও বুঝি? নিজেকি কিছুই খাওনা. নাকি?. ছেলে তো আর একটু মোটা হলেই বেলুনের মতো ফেটে যাবে গো ! নিজেরাও একটু খাও…..।
বর্ষা: কি করবো ভাবী…শরীর স্বাস্থ্য আল্লাহর দান, কেউ ২ বেলা না খেয়েই মোটা হয়
আবার কেউ দিনে ১০ বার খেয়েও চেহারা বান্দরের মতো … চিকনা…।
২য় দৃশ্য:
সামিন: লুঙ্গি/ সাট ঠিক করতে করতে, ..
দাও …। আজকেও দেরি হলো খাবার পৌছে দিতে..।
বর্ষা: সামিন! বাবা.. আজ তোর ওই আন্টির কথায় কি তুই কষ্ট পেয়েছিস?
ছেলে: ঠিক আছে মা।
দোকানের সামনে /৪ জন বসে আছে কথা বলবে
২ জনই
সামিন: হ্যা … আমাকে মটু বলা… আর একবার বলে
দেখ…মেরে আলু ভর্তা বানিয়ে খাবো….।
ছেলে: মটু মটু … বলে, আমাকে ধরতে পারবি না …। বলে
এ দৌড়াবে ধরতে… ও পালাবে….। দোকানের সামনে দিয়ে পালাবে…।
সামনে এসে হাপাবে…।
দোকানে বসে থাকা েএক লোক:
সামিন: আব্বা … রাস্তায় লোকে আমাকে মটু মটু বলে
খেপায় … তুমি কিছু করো।
লোক: ভাই এটা তোমার ছেলে?এত মোটা ক্যান ….
দোকানদার: দেখ ভাই … আমার ছেলেকে নিয়ে এভাবে
তামাশা করো না…। ওর খুব কষ্ট পায়।
তোমার মেয়ের নাকি ক্যানছার কেই যদি এটা
তামাশা করে কেমন লাগবে তখন?
লোক: আমার ভূল হয়েছে, খোমা করে দেন…..। বাবা আমার কথায় কিছু মনে করো না….। ( বিল দিয়ে .. ) আসি ভাই ….।
৪র্থ: দৃশ্য:
ছেলে:
আমার বাপের অনেক টাকা পয়সা আছে তাই
….।
মেয়ে: না গো … সোনা …তোমার সালমান খানের মতো …. কি
সুন্দর চিকনা স্লিম বডি..। এই জন্যই তোমাকে ভালো বাসি…।
সামিন পাশ দিয়ে যেতেই দাড়িয়ে বললো…
ছেলে : ওগো সোনা? তোমার আবার কি হলো? …. কি থেকে কি হয়ে গেলো… ?
৫ম: দৃশ্য: কিছু দিন পর
১ম: আম চুরিতে আমি ওস্তাত…. দেখ কিভাবে আমি চুরি করি
২য়: ঠিক আছে…. আজকের মিশন আম কাঠাল চুরি… তবে চুরি করে কেউ ধরা‘ পড়লে …ভূলেও কারো নাম
বলবি না….। যে যার মতো পালাবি….।
সামিন: দোস্ত …. আমাকেও তোদের … টিমে নিবি?
মোড়ালের বাগান বাড়িতে … ‘অনেক জাম গাছ… জাম পেকেছে…।
১ম: সালা বলে কি রে? …. জাম গাছে কি তুই উঠবি? …
২য়: ওর যে …. ফুটবলের মতো …. চেহারা …. ও উঠবে জাম গাছে? তোকে নিয়ে ধরা পড়ে কেলানি খাই আরকি। …
১ম: দেখ
ভাই আটার বস্তা … আমাদের হাতে একদম সময় নেই…. চল…. । আগে তোর
.. মোটা শরির থেকে… (নক দিয়ে গুতা… কোমরে)
এই তেল চর্বি কমা… তারপর। …. বাপি বাড়ি যা….। এবার সে মাথা … নিচু করলে …. ঘুরলো …. তারাও চলে . গেলো…।
দৃশ্য: ৫:
সামিনঃ মা, এরপর যতদিন না পর্যন্ত আমি আমার স্বাস্থ্য কমিয়ে চিকন হতে পারবো, ততোদিন আমি স্কুলে যাবোনা। বন্ধুদের সাথে
খেলব না, বাড়ি থেকেই বের হবো না। ..
সামিন ব্যায়াম করছে….. বুক ডন, এই সময় …. মা আসবে .. বলবে…
মা: না, আমার সামনে খাবি, খাবার না খেয়েই সব খাবার
পুকুরে ফেলে দিস.। অনেক তো ডায়েট হয়েছে। এবারে অন্তত ঠিক করে খাওয়াদাওয়া কর। বলে মুখে এক লোকমা
তুলে দেয়…..
সামিন খেয়েই …. বলে
মা: হায় হায় ,, কি হলো… বাপ ,,, এই নে পানি খা …।
পানি খাওয়ার পর ….
মনিষা:
উঠে গিয়ে … ও গো … ছেলে তো কিছুই খাচ্চে না….। পেটে কিচুই রাখতে পারছে না
….
বাবা: চলো … ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই ….।
ঠিক আছে
চলো…..। সিন শেষ।
৭ম দৃশ্য:
ডাক্তার
বুক থেকে …. স্থেটিস্কোপ সরিয়ে কাট
থেকে খুলে বলবে ….।
বাবা: ডাক্তার বাবু, আমার ছেলের কি
হয়েছে? …
খুব কম সময়ে ওজন কমাতে যেয়ে সামিনের "ইটিং ডিজঅর্ডার হয়" যার কারনে সামিন এই রোগে আক্রান্ত হয়।
মনিষাঃ ডাক্তার আপনি দয়া করে আমাদের ছেলের চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করে দিন! ওর এই অবস্থা আমরা দেখতে পারছিনা.. সাহায্য করেন আমাদের।
৮ম দৃশ্য:
বাবা, একটু দূরে .. পাগলের মতো … হয়ে খুটির সাথে … হেলান দিয়ে … ছেলের দিকে
তাকিয়ে রয়েছে…।
মনিষাঃ বাবা, এভাবে বলেনা! তুই সুস্থ হয়ে যাবি। একটু খাওয়ার চেষ্টা কর সোনা। তুই ছাড়া আমাদের কে আছে! আমরা তো তোকে ভালোবাসি বাবা।
আমি খেতে কতও ভালোবাসতাম, আর এখন খেতেও পারিনা। পেটের ভেতরে ভীষণ ক্ষুধা মা।
সামিনঃ মাগো! আমি চলে যাচ্ছি মা! ওরা আমাকে বাঁচতে দিলোনা মা..
"সামিনকে জড়িয়ে ধরে মনিষা বসে থাকে। সামিন মায়ের ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদত্ব একসময় সামিন চুপ হয়ে যায়। কোনো কথা বলেনা। মনিষা ভাবে ছেলে হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে"
মনিষাঃ বাবা, ঘুমিয়ে পরলি? না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলি!
মনিষা সামিনের বুকে মাথা পেতে সামিনের হৃদস্পন্দন শুনতে চেষ্টা করে। কিন্তু কই! সামিনের হৃদস্পন্দন যে চলেনা। মনিষা চিৎকার দিয়ে উঠে"
প্রতিবেশীঃ হায়রে এই বয়সে ছেলেটা চলে গেলো!
মনিষাঃ এই আপনারা!, আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচতে দেননি। এখন বলছেন, ভালো ছেলে ছিলো?
আমার ছেলের বেশী স্বাস্থ্যের জন্য কম কথাতো শুনাননি ওকে। আমার বেচারা ছেলেটা মনেমনে কষ্ট পেতো! দরজা লাগিয়ে কাঁদতো! প্রতি পদে আমার ছেলেকে বিভিন্ন ভাবে অপমানের স্বীকার হতে হতো! ওর প্রতিভা কিংবা ভালো গুণ দিয়ে কেউ ওর বিচার করেনি, করেছে ওর স্বাস্থ্য দিয়ে। আর এখন এসেছেন, শোক প্রকাশ করতে! চলে যান আপনারা সবাই.. আপনারা দেন নি আমার ছেলেকে ভালোভাবে বাঁচতে..