শব্দ কী? শব্দের বৈশিষ্ট্য কি কি? উৎস অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ। কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয়?

শব্দ কী? শব্দের বৈশিষ্ট্য কি কি? উৎস অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ। কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয়?
কিভাবে শব্দ উৎপন্ন হয়;  শব্দ উৎপন্ন হয়;  শব্দ ;

এই লেখাটিতে শব্দ সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আজকের আলোচনার বিষয়গুলো- শব্দ কি? শব্দের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি? শব্দের বেগ কি? শব্দ কি ধরনের তরঙ্গ? উৎস অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ? শব্দেতর তরঙ্গ, শব্দোত্তর তরঙ্গ ও শ্রুতিযোগ্য তরঙ্গ কি? কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ উৎপন্ন হয়?

শব্দ কী? What is the sound?

কোন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ আকারে সঞ্চালিত হয়ে যা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি জাগায় তাই শব্দ। 
শব্দ এক প্রকার শক্তি। শব্দ শক্তি সঞ্চালনের জন্য অবশ্য ই মাধ্যমের প্রয়োজন।

শব্দের বৈশিষ্ট্য- Properties of sound

অন্যান্য শক্তির মতো শব্দেরও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম রয়েছে। শব্দের বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম গুলো আলোচনা করা হল ।
১. যেকোন কম্পনশীল বস্তু থেকে শব্দ শক্তি উৎপন্ন হয়।
২. শব্দ এক প্রকার শক্তি যা কম্পনশীল বস্তু থেকে উৎপন্ন হয়।
৩. শূন্য মাধ্যম দিয়ে শব্দ বিস্তার লাভ করতে পারে না।
৪. স্থিতিস্থাপক মাধ্যম অবলম্বনে তরঙ্গের আকারে বিস্তার লাভ করে।
 

শব্দের বেগ কি ? What is the speed of sound?

একক সময়ে শব্দ কোন নির্দিষ্টি দিকে যে দুরত্ব অতিক্রম করে তকে শব্দের বেগ।
বিভিন্ন মাধ্যমের শব্দের বেগ ভিন্ন ভিন্ন হয়। বায়ূ মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে কম এবং কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি। বায়ূ মাধ্যমে শব্দের বেগ ৩৩২ মি./সে বা 332 m/s। তরল মাধ্যমে শব্দের বেগ ১৪০০ মি/সে বা 1400 m/s এবং কঠিন মাধ্যতে শব্দের বেগ ৫২০০ মি/সে বা  5200 m/s ।  

শব্দ কি ধরনের তরঙ্গ? What type of sound waves?

শব্দ হলো এক ধরনের অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। 


শব্দ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য - Characteristics of sound waves

  • শব্দ তরঙ্গের জন্য অবশ্যই জড় মাধ্যমের প্রয়োজন।
  • জড় মাধ্যমের কণার গতির বা স্পন্দনের ফলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।
  • জড় মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গ সৃষ্টি করে, কিন্তু কণাগুলো স্থায়ী স্থানান্তর হয় না। 
  • শব্দ তরঙ্গবেগ মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
  • শব্দ তরঙ্গের প্রতিসরণ,  প্রতিফলন ও উপরিপাতন হয়।
  • তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়।
  • মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দন গতি এবং তরঙ্গ বেগ এক নয়।

শব্দের উৎস কাকে বলে? What is the source of the sound?

যেকোন কম্পনশীল বস্তু থেকে শব্দের সৃষ্টি হয়। শব্দের উৎস বলতে কম্পনশীল কোন বস্তুকে বুঝানো হয়। শব্দের উৎস কঠিন, তরল বা বায়বীয় যেকোন ধরনের হতে পারে। যেমন- গিটারের তার টেনে ছেড়ে দিলে তা কম্পমান অবস্থা তৈরি করে এবং গিটারে শব্দ সৃষ্টি হয়। আমার ঢোল এ আঘাত করলে ঢোলের পর্দা কম্পিত হয়। কম্পিত পর্দা থেকে শব্দ তৈরি হয়। 
এরকম যে কোন কম্পিত বস্তু থেকে শব্দ তৈরি হয়। 

উৎস অনুসারে শব্দের প্রকার। Sound types by source.

মানুষের শ্রাব্যতার সীমার ওপর ভিত্তি করে শব্দকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। 
যথাঃ
  • শ্রুতিগোচর শব্দ
  • শব্দোত্তর শব্দ 
  • শব্দেতর শব্দ

শ্রুতিগোচর শব্দ Audible sound

কোন বস্তুর কম্পন যদি প্রতি সেকেন্ডে বিশ থেকে বিশ হাজার হার্জ এর মধ্যে হয় তাহলে সেই বস্তু থেকে যে শব্দ সৃষ্টি হয় সেই শব্দকে শ্রুতিগোচর শব্দ বলা হয়। মানুষের শ্রাব্যতার সীমা মূলত বিশ থেকে বিশ হাজার হার্জ। 
তবে শিশুরা বিশ হাজার কম্পাঙ্কের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পায়। কিন্তু বয়ষ্ক ব্যক্তি পনের হাজারের বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায় না ।

শব্দোত্তর শব্দ 

কোন কম্পনশীল বস্তুর কম্পাঙ্ক বিশ হাজারের বেশি হলে ঐ বস্তু থেকে উৎপন্ন শব্দ মানুষ শুনতে পায় না। অর্থাৎ বিশ হাজার হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দকে শব্দোত্তর বলা হয়। এ ধরনের শব্দ শ্রুতিযোগ্য নয়। তবে মানুষ এই কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে না পারলেও কুকুর, বিড়াল, বাদুর সহ অন্যান্য প্রাণী মানুষের তুলনায় উচ্চতর কম্পাঙ্কের  শব্দ শুনতে পায়।

শব্দেতর শব্দ

শব্দ কী? শব্দের বৈশিষ্ট্য কি কি? উৎস অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ। কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয়?
কোন শব্দের কম্পাঙ্ক বিশ হার্জ এর কম হলে সেই শব্দ মানুষ শুনতে পায় না। তাই বিশ হার্জ এর কম কম্পাঙ্কের শব্দকে শব্দেতর বলা হয়। 

কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয় ? How sound is produced from vibrating objects?

কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয় তা ভালে ভাবে বুঝার জন্য আমরা একটি কম্পনশীল সুরশলাকায় কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয় তা দেখার চেষ্টা করব।
সুরশলাকা বা টিউনিং ফর্ক হলো একটি U আকৃতির হাতল যুক্ত ইস্পাতের দন্ড। দন্ডের নিচের দিকে একটি ইস্পাতের হাতল রয়েছে। সুরশলাকার কোন এক বাহুতে আঘাত করলে তা পর্যাবৃত্ত গতিতে কাঁপতে থাকে। এবং শব্দ সৃষ্টি হয়। 

কম্পনশীল বস্তু থেকে কিভাবে শব্দ সৃষ্টি হয়

এই পরীক্ষণটি করার জন্য নিম্নোক্ত উপকরণগুলো প্রয়েোজন হবে-
একটি সুরশলকা
শোলার বল
স্ট্যান্ড
হাতুরি

কার্যপদ্ধতি
সুর শলাকার গাঁ ঘেঁষে একটি শোলার বল স্ট্যান্ড এর মাধ্যমে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। সুর শলাকাটিকে শক্ত ভাবে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন তা নড়াচড়া না করতে পারে। চিত্রের মত করে সবগুলো স্থাপন করতে হবে। এখন হাতুরি দিয়ে সুর শলাকায় আঘাত করলে দেখা যাবে শব্দ সৃষ্টি হয়েছে এবং শোলার বল কম্পিত হতে থাকবে। ধীরে ধীরে শব্দ কমতে থাকবে এবং শোলার বল টির কম্পন ও কমতে থাকবে। এবার হাত দিয়ে সুরশলাকাটিকে ধরলে সুরশলাকাটির কম্পন থেমে যাবে এবং শব্দ উৎপন্ন হওয়া বন্ধ হবে।
একইভাবে যেকোন কম্পনশীল বস্তু থেকে শব্দ সৃষ্ট হয়। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url