অ্যাবাকাস কি? আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ।

অ্যাবাকাস কি? আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ।

অ্যাবাকাস কি? আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ।

কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ধারাবাহিক আলোচনার ২য় পর্বে আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আজকের আলোচনার বিষয়গুলো - অ্যাবাকাস কি? আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশের ধারাবাহিক বর্ণনা এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিকাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও তাদের অবদান। সবশেষে কম্পিউটার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর।

গণনার কাজে সহায়তার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিক কৌশল প্রচলিত থাকলেও অ্যাবাকাস নামক একটি প্রাচীন গণনার যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসাবে ধরা হয়। 

অ্যবাকাস 

অ্যাবাকাস প্রাচীনতম গণনার যন্ত্র, যা একটি ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনার কাজ পরিচালিত করে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে অ্যাবাকাসের সর্বপ্রথম ব্যবহার শুরু করা হয়েছিল চীনে। গুটিগুলো সঞ্চালন করে অ্যাবাকাস এর সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগের কাজ করা যেত। 
চিনে অ্যাবাকাসকে বলা হয় সোয়ান পান (Suanpan) জাপানে সরবান (Soroban) এবং রাশিয়াতে বলা হয় স্কেটিয়া(Sketia)।


নেপিয়ারের অস্থি বা দন্ড

স্কটল্যান্ডের  গণিতবিদ জন নেপিয়ার ১৬১৪ সালে লগারিদম এর সারণি আবিষ্কার করেন। এর তিন বছর পর তিনি দাগ কাটা এবং সংখ্যা বসানো দন্ড ব্যবহার করে সংখ্যা ভিত্তিক গণনা যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এসব দন্ড নেপিয়ারের অস্থি নামে পরিচিত । এই আবিষ্কার গুন, ভাগ, বর্গমূল নিরূপনের কাজ অনেক সহজে করে দেয়।


স্লাইড রুল

নেপিয়ারের এলগরিদম ব্যবহার করে উইলিয়াম অটোরেট ১৬৩০ সালে  প্রথম বৃত্তাকার ফ্লাইট  রুল আবিষ্কার করেন।


প্যাস্পকালেন

 ১৬৪২ সালে ফরাসি ব্লেজ প্যাসকেল একটি গণনা যন্ত্র তৈরি করেন । তিনি এ যন্ত্রে  গিয়ারের সাহায্যে চাকা চালানোর পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন যুগের সূচনা করেন।


যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর

১৬৭১ সালে জার্মান গণিতবিদ গট ফ্রাইট ভন লিবনিজ  সিলিন্ডার আকৃতি বিশিষ্ট গিয়ার ব্যবহার করে একটি যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। এটি বিশ্বের প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর। Stepped Reckoner নামে পরিচিত এই ক্যালকুলেটরটি এর সাহায্যে পৌনঃপুনিক যোগ, গুণ এবং ভাগ করা যেত । ১৮২০ সালে ফ্রান্সের টমাস  দা কলমার লিবনিজের যন্ত্রের অনুরূপ টমাস এরিথমোমিটার  নামক যন্ত্র তৈরি করেন এটি ছিল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক হস্ত চালিত ক্যালকুলেটর


ডিফারেন্স ইঞ্জিন

১৭৮৬ সালে জার্মানির মুলার ডিফারেন্স ইঞ্জিন নামে পরিচিত একটি ক্যালকুলেটর বা গণনার যন্ত্র তৈরীর পরিকল্পনা করেন ।  এর প্রায় দুই যুগ পর ১৮১২ সালে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ আরো উন্নত ডিফারেন্স ইঞ্জিন বা বিয়োগ ফল ভিত্তিক গণনার যন্ত্র উদ্ভাবনের পরিকল্পনা করেন ।  চার্লস ব্যাবেজ ছিলেন একাধারে গণিতবিদ, দার্শনিক, আবিষ্কারক এবং যন্ত্র প্রকৌশলী। ১৮১৩ সালে তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন কে উন্নত করার জন্য রয়েল সোসাইটি থেকে অনুদান পান কিন্তু সেই সময় প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে মেশিনটি  তৈরিতে বিঘ্ন ঘটে এবং রয়েল সোসাইটি অনুদান বন্ধ করে দেন । 1833 সালে পরিকল্পনা করেন এবং নকশা তৈরি করেন ব্যাবেজের এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন এর পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ছিল। ব্যাবেজ আধুনিক কম্পিউটারের মতোই তার মেশিনে গাণিতিক ইউনিট, স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ ইউনিট, ইনপুট-আউটপুট চিহ্নিত করেন। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে তার উদ্ভাবিত যন্ত্র সেই সময় সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে ১৯৯১ সালে তার ডিজাইন থেকে সফলভাবে কর্মক্ষম একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়। অনেকে তাকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। আবার তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনকও বলা হয় থাকে।

অ্যানালিটিকাল  ইঞ্জিনি সাধারণত অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম করার ব্যবস্থা ছিল এবং সফটওয়্যার দরকার হতো। সফটওয়্যার তৈরির জন্য ব্যাবেজ বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড বাইরনের কন্যা আগস্টা বাইরনকে নিয়োগ দেন। প্রবর্তক হিসেবে সম্মানিত করা হয়। ১৮৮২ সালে তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাবেজ এর ইঞ্জিন সম্পর্কে বক্তব্য দেন এডা ।

আডা সে সময় ব্যাবেজের সহায়তায় পুরো বক্তব্যে ইঞ্জিনের কাজে ধারাটি বর্ণনা করেন কাজের ধারা বর্ণনা করার সময় তিনি একটি ধাপ অনুসারে  ক্রমাঙ্কিত করেন।  আর মৃত্যুর ১০০ বছর পর 1953 সালে সেই নোট আবারো প্রকাশিত হলে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন এটা আসলে এলগরিদম।  প্রোগ্রামিং এর ধারণাটিকেই প্রকাশ করেছিলেন। প্রোগ্রামিং ভাষা ‘ এ্যাডা ‘  তার নাম অনুসারেই নামকরণ করা হয়।


পাঞ্চ কার্ড

পাঞ্চ কার্ড  হলো এক প্রকারের শক্ত কাগজের তৈরি কার্ড। যা এর উপরের ছিদ্রের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ভিত্তিতে ডিজিটাল তথ্য প্রকাশ করে। ইউনিট রেকর্ড জানতে তথ্য ইনপুট, প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো এই কার্ড। হারমেন হরিলিত প্রথম এই কার্ডে ডাটা সংরক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে বলে একে হরিলিত কারো বলা হয় ১৮০১ সালে  বস্ত্রশিল্পে নকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য  পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করা হয়। ফ্রান্সের জোসেফ মেরি জে কার্ড সর্বপ্রথম বস্ত্র শিল্পে পান কার্ড ব্যবহার শুরু করেন ।


টেবুলেটিং মেশিন

১৮৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডক্টর  হারমেন হরলিথ নামের একজন  পরিসংখ্যানবিদ সেন্সাস মেশিন বা ট্যাবলেটটিন মেশিন নামে একটি গণণাচল আবিষ্কার করেন। তার উদ্ভাবিত জানতে তিনি পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করে । 1990 সালের শুমারি মাত্র তিন বছরে শেষ করেন।


ট্যুরিং মেশিন

ইংরেজ গণিতবিদ অ্যালান মেথিসন টুরিং ১৯৩৬  সালে ”ট্যুরিং মেশিন” এর মাধ্যমে গণনা এবং অ্যালগরিদম ধারণা প্রবর্তন করেন। টুরিংকে তাত্ত্বিক কম্পিউটার প্রকৌশল এর জনক বলা হয়।


ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কম্পিউটার

যান্ত্রিক এবং ইলেকট্রনিক উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত কম্পিউটার কে ইলেকট্র মেকানিক্যাল কম্পিউটার বলা হয়। ১৯৩৭ সালে আমেরিকার হারবার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ডক্টর হাওয়ার্ড এইচআইকেন  ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল টেকনিক ব্যবহার করে চার্লস ব্যাবেজের এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মত করে একটি যন্ত্র তৈরি পরিকল্পনা করেন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। ১৯৪৪ সালে হাওড়া আইকেন  পৃথিবীর প্রথম ইলেকট্রন মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করেন। কম্পিউটার টিতে ভ্যাকুয়াম ভালভ ব্যবহার করেননি।  কম্পিউটারটি সম্পূর্ণভাবে  তড়িৎ যান্ত্রিক গ্রিলের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করেছিলেন । এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম স্বয়ংক্রিয়  গণনা যন্ত্র  আইবিএম অটোমেটিক সিকুয়েন্স কন্ট্রোল ক্যালকুলেটর। যন্ত্রটির নামকরণ করেন মার্ক ওয়ান  মূলত মার্ক ওয়ান ছিল হারবার বিশ্ববিদ্যালয় ও আইভিএম কোম্পানির যৌথ উদ্যোগের একটি ফসল।



ইলেকট্রনিক কম্পিউটার

১৯৩৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক জন  আটানাসফ এবং তার ছাত্র ক্লিফোর্ট  বেরি ভ্যাকিউম টিউব ব্যবহার করে। একটি ইলেকট্রনিক কম্পিউটার নির্মাণ করেন উদ্ভাবকের নাম অনুসারে এটির নাম রাখা হয় এ বি সি (ABC)  এতে তথ্য সংরক্ষণ এর জন্য মেমোরি হিসেবে ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়।

 ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনিসিলভিনিয়া ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক জন মাউসলি ও তার ছাত্র প্রেসপাস যৌথভাবে একটি গণনার যন্ত্র তৈরি করেন । যন্ত্রটির নাম এনিয়েক(ENIAK)  এটি পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও সফল কম্পিউটার।
পরবর্তীতে এই যন্ত্রটির বিভিন্নভাবে উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং আজকের মর্ডান কম্পিউটারের রূপ নিয়েছে।



কম্পিউটার জাদুঘর

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত  কম্পিউটার হিস্টরি মিউজিয়াম বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার জাদুঘর । ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


কম্পিউটার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর।

অ্যাবাকাস কি?
উত্তরঃ  এক প্রকার গণনার যন্ত্র।

লগারিদমের প্রবর্তক কে?
উত্তরঃ জন নেপিয়ার। 

কম্পিউটারের জনক কে?
উত্তরঃ চার্লস ব্যাবেজ।

প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর কে তৈরি করেন?
উত্তরঃ  চার্লস ব্যাবেজ।


বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র কম্পিউটার জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রে।

বিশ্বের প্রথম ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার নাম কি ?
উত্তরঃ  ENIAC 

প্রথম কম্পিউটার কোনটি?
উত্তরঃ  ENIAC
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url