সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ
গণিতের আজকের পর্বে কয়েকজন বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদের সাথে পরিচিত হব। পিথাগোরাস , ব্রহ্মগুপ্ত, আর্কিমিডিস, ইউক্লিড , আর্যভট্ট, আল খোয়ারইজমি, জন নেপিয়ার, গ্যালিলিও গ্যালিলি, স্যার আইজ্যাক নিউটন, লিওনার্দো ওয়েলার, জোহান কার্ল ফ্রেডরিক গাউচ, আলবার্ট আইনস্টাইন, কার্ল পিয়ারসন, গেয়র্গ কান্টর ।
পিথাগোরাস ( Pythagoras)
পিথাগোরাস ছিলেন একজন গ্রিক দার্শনিক, সঙ্গীতজ্ঞ ও গণিতবিদ। বিভিন্ন সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পিথাগোরাসের উপপাদ্য। তিনি প্রমাণ করেন ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি সর্বদা দুই সমকোণ । তিনি অমূলদ সংখ্যা পাই এর ধারণা দেন।
ব্রহ্মগুপ্ত (Bamma gupta)
ব্রহ্মগুপ্ত ছিলেন একজন গণিত ভারতীয় গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী। সম্ভবত তার কাজেই প্রথম শুন্য এবং ঋণাত্মক সংখ্যার নিয়মিত ব্যবহার শুরু হয় ।, ব্রহ্মগুপ্ত হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে উজ্জয়িনী জ্যোতিষ্ক পরিদর্শন কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ছিলেন । গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে তার লেখা গুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ”ব্রহ্ম স্ফুট সিদ্ধান্ত”।তাকে আগুরিগমের জনক বলা হয়।
আর্কিমিডিস (Archimedes)
আর্কিমিডিসের প্রাচীনকালের শ্রেষ্ঠ গণিত পদার্থবিদ গণিতবিদ জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। আনুমানিক 287 খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন কিসের উপনিবেশ সিসিলি দ্বীপের জন্মগ্রহণ করেন। পদার্থবিদ্যা ও জ্যামিতিতে তার অবদান সবচেয়ে বেশি প্রাচীন পদার্থবিদদের মধ্যে তিনি প্রথম সার্থকভাবে পদার্থবিজ্ঞানে গণিত ও জ্যামিতির ব্যবহার শুরু করেন । তাকে স্থিতি বিদ্যার জনক বলা হয়। খ্রিস্টপূর্ব বা ২১২ সালে পিউনিক যুদ্ধের সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইউক্লিড (Euclid)
ইউক্লিড একজন বিখ্যাত গ্রিক গণিতজ্ঞ তার প্রধান বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ ”ইউক্যালিডস এলিমেন্টস ”। ”এলিমেন্টস” হল এখনো টিকে থাকা গণিতের প্রাচীনতম নিদর্শন। এটি ১৩ খন্ড বিশিষ্ট ক্রিম গাণিতিক ও জ্যামিতিক গ্রন্থ। সমগ্র বইটিকে জ্যামিতির বাইবেল বলা হয় । ইউক্লিডকে জ্যামিতির জনক বলা হয়।
আর্যভট্ট
আর্যভট্ট ছিলেন প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের মধ্যে একজন। তাকে পাটিগণিতের জনক বলা হয়। চার খন্ডের রচিত আর্যভট্টীয় ছিল তার বিখ্যাত গ্রন্থ। আর্যভট্ট সর্বপ্রথম পাই এর মান তথাবৃত্তের পরিধির সঙ্গে এর ব্যাসের অনুপাত ৩.১৪১৬ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
আল খোয়ারইজমি (Al - Khwarizmi)
খোয়ারইজমি আধুনিক বীজগণিতের জনক ও শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ । তার শ্রেষ্ঠ অবদান হলো “কিতাব আল জাবার আল মোকাবিলা” নামক একটি বই যা পৃথিবীতে বীজগণিতের উপর সর্বাধিক প্রভাবশালী। এই বইটি ইউরোপ এ লাটিন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে অ্যালজেব্রা নামে। তিনি খলিফা আল মামুনের বাইতুল হিকমা সংলগ্ন চাকরি করতেন।
জন নেপিয়ার ( John Napier)
জন নেপিয়ার ( John Napier) ছিলেন একজন স্কটিশ গণিতবিদ। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন লগারিদম ব্যবস্থা উদ্ভাবনের জন্য। নেপিয়ার ছিলেন সম্ভবত প্রথম গণিতবিদ যিনি সুশৃঙ্খলভাবে দশমিক বিন্দুর ব্যবহার শুরু করেন। তিনি পাটিগণিত গণনা সম্পাদনায় জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক ব্যবস্থা ও উদ্ভাবন করেন।
গ্যালিলিও গ্যালিলি (Galileo Galilei)
গ্যালিলিও ছিলেন একজন ইতালীয় পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক ও বলা হয়ে থাকে। তিনি চাঁদের কলঙ্ক এর কারণ আবিষ্কার করেন। তিনি বৃহস্পতি গ্রহের একটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। গ্যালিলিও শনির বলয় আবিষ্কার করেন।
স্যার আইজ্যাক নিউটন (Sir Isaac Newton)
স্যার আইজ্যাক নিউটন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ। গণিত সূত্র ও ক্যালকুলাস আবিষ্কারের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। তাকে ক্যালকুলাসের জনক বলা হয়। তার অমর গ্রন্থ ‘ ফিলোসোপিয়া প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা ’ পদার্থবিদ্যার বলবিদ্যার উপর রচিত হলেও এটি মূলত গণিত ভিত্তিক গ্রন্থ। নিউটন ১৬৪৩ সালের ৪ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের লিংকন শায়ার এ জন্ম গ্রহণ করেন। ১৭২৭ সালের ৩১ মাস ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লিওনার্দো ওয়েলার ( Leonhard Euler)
লিওনার সুইজারল্যান্ড রাশিয়ার গণিতবিদ । তার আবিষ্কৃত সমীকরণটি কে পৃথিবীর সর্বাধিক সুন্দর সমীকরণ বলা হয় । তাই তাকে গণিত ইতিহাসে সর্বাধিক সৃজনশীল গণিতবিদ বলা হয়। গণিত চর্চা করতে করতে শেষ জীবনে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। গাণিতিক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত গাণিতিক ফাংশন এর ধারণা তারই আবিষ্কার ।ওয়েলার গ্রিক শব্দ e দ্বারা স্বাভাবিক লগারিদমে ভিত্তি এবং i দ্বারা কাল্পনিক সংখ্যা প্রকাশ করেন পাই এর জন্য চিহ্নটি ব্যবহার করেন। যোগের জন্য সাবমিশন চিহ্নটি প্রবর্তন করেন।
জোহান কার্ল ফ্রেডরিক গাউচ ( Johann Carl Friedrich Gauss)
জোহান কার্ল ফ্রেডরিক গাউচ গণিতের প্রায় সকল শাখায়ই সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন এবং সবচেয়ে বেশি মৌলিক আবিষ্কার সম্পাদনা করেছেন। তাই তাকে বিশেষ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ এবং গণিতের যুবরাজ বলা হয়। গণিত শাস্ত্রী তার বিশাল অবদানের জন্য তাকে গণিত সম্রাট বলা হয়ে থাকে। ১৮০১ সালে তার সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ” ডিসকিশিয়নেস অ্যারিথমেটিকা “ প্রকাশিত হয় পরিসংখ্যানে। পরিমিতি ও বিন্যাস সিজনের জন্য পরিসংখ্যানবিদদের কাছে অমর হয়ে আছেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)
আলবার্ট আইনস্টাইনকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ তথ্যের পদার্থবিদ বলা হয়। তার শ্রেষ্ঠকর্ম হল আপেক্ষিক তত্ত্ব। তিনি ভর শক্তি সমতুল্য তার বিখ্যাত সূত্র E = mc2 প্রতিপালন করেন। তিনি অ ইউক্লিড ইউ জ্যামিতির উপর কাজ করেন। তিনি ১৪ মার্চ ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ওরটেমবার্ক উলুমে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫ সালে ৭৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিস্টনে মৃত্যুবরণ করেন।
কার্ল পিয়ারসন (Karl Pearson)
কার্ল পিয়ারসন সিল্যান্ড ইংল্যান্ড এর শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। পরিসংখ্যানের বেশিরভাগ গাণিতিক সূত্রাবলী তিনি আবিষ্কার করেন । তাকে গাণিতিক পরিসংখ্যানের স্থপতিও বলা হয়।
গেয়র্গ কান্টর (Georg Cantor)
গেয়র্গ কান্টর রাশিয়ার বিখ্যাত গণিতবিদ এবং দার্শনিক তাকে সেট তত্ত্বের জনক বলা হয়। তিনি প্রমাণ করেন যে বাস্তব সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যার চাইতে সংখ্যায় বেশি।
গণিতের বিভিন্ন শাখার জনক
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ
১। পিথাগোরাসের জন্ম কোথায়?
উত্তরঃ গ্রিসে।
২। আর্কিমিডিসের জন্মস্থান-
উত্তরঃ গ্রিস।
৩। ইউক্লিড এর মহাগ্রন্থ ইলিমেন্টস কয়টি খন্ডে বিভক্ত?
উত্তরঃ ১৩ টি।
৪। ক্যালকুলাস কে আবিষ্কার করেন?
উত্তরঃ নিউটন।
৫। শুন্য এর আদি ধারণা কাদের ?
উত্তরঃ ভারতীয় গণিতবিদদের।
৬। সেটতত্ত্বের জনক কে?
উত্তরঃ জর্জ ক্যান্টর।
৭। পাটিগণিতের জনক কে?
উত্তরঃ আর্যভট্ট।
৮ । ত্রিকোণমিতি এর জনক কে?
উত্তরঃ হিপ্পারচাস।
৯। আর্কিমিডিসের জন্ম কোন শহরে?
উত্তরঃ সিসিলি।
১০। লগারিদমের জনক কে?
উত্তরঃ জন নেপিয়ার।