কম্পিউটারের ইতিহাস। কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি ও কি কি? কম্পিউটারের প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য।

কম্পিউটারের ইতিহাস। কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি ও কি কি? কম্পিউটারের প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য।

কম্পিউটারের ইতিহাস। কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি ও কি কি? কম্পিউটারের প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য।

কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির ৩য় পর্বে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে তা- কম্পিউটারের ইতিহাস । কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি ও কি কি? কম্পিউটারের প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো ।

কম্পিউটারের বিবর্তন এবং প্রজন্ম (First Generation Computer)

কম্পিউটারের হার্ডওয়ারের কোন পরিবর্তন বলতে মূলত কম্পিউটারের প্রজন্ম বা জেনারেশন কে বুঝায়। কম্পিউটারের জেনারেশন বা প্রজন্ম বলতে এর প্রযুক্তিগত বিবর্তন কে বোঝানো হয়ে থাকে।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (First Generation Computer)

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সার্কিট এ বায়ুশূন্য টিউব বা ভ্যাকিউম টিউব ব্যবহার করা হতো। কম্পিউটার গুলো আকৃতিতে বড় থাকার কারণে সহজে গ্রহণযোগ্য ছিল না। কম্পিউটারের বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতো এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হতো। পাঞ্চ কার্ডের মাধ্যমে ইনপুট দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এসব কম্পিউটারের ব্যবহার ছিল খুব সীমিত। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রোগ্রামের জন্য মেশিন ও অ্যাসেম্বলি ভাষা ব্যবহার করা হতো। 
উদাহরণস্বরূপঃ
Mark -1
NUIVAC
ENIAC
EDSAC
IBM 650
IBM 704

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Second Generation Computer)

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ভ্যাকিউটিবের পরিবর্তে  ট্রানজিস্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। 1948 সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরেটরিতে জন বারডিন, উইলিয়াম শকলে এবং ওয়ালটার ব্রাটেন  ট্রানজিস্টার আবিষ্কবার করেন। দুটি অর্ধপরিবাহী ডায়োডকে পাশাপাশি যুক্ত করে একটি অর্ধ পরিবাহী ট্রায়োড তৈরি করা হয়। একে ট্রানজিস্টার বলে। ট্রানজিস্টার মূলত এমপ্লিফায়ার বা বিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ট্রানজিস্টার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক্স এ বিপ্লব শুরু হয়। টিউবের তুলনায় ট্রানজিস্টার আকারে ছোট। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমহয়। দামে সস্তা এবং দ্রুত গতি সম্পন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার গুলো আকৃতিতে ছোট, দ্রুতগতি ও অধিক নির্ভরযোগ্য হয়। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে সর্বপ্রথম উচ্চ স্তরের ভাষা ব্যবহার শুরু হয়। ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন ইনপুট আউটপুট ব্যবস্থাও এ প্রজন্মের কম্পিউটারের ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
IBM 1401
CDC 1604
RCA 301
RCA 501
BCR 300
GE 200
Honey well 200
IBM 1620

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation Computer)

1998 সালের রবার্ট নাইসি এবং জ্যাক কিলবি সমন্বিত বর্তনি বা IC (Integrated Circuit) আবিষ্কার করেন। সমন্বিত বর্তনি বা IC (Integrated Circuit) ইলেকট্রনিক্স জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেন। মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স এর যাত্রা মূলত তখন শুরু হয়। একটি মাত্র আইসিতে অনেকগুলো ট্রানজিস্টার, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর এবং অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে একটি ক্ষুদ্র সিলিকন পাতের উপর স্থাপন করা হয়। কম্পিউটার আকার অনেক ছোট হয়। দামে অনেক সস্তা হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়। কাজের গতি এবং নির্ভরযোগ্যতা অনেক গুনে বেড়ে যায় তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের এস এস আই (SSI) এবং এম এস আই (MSI) ধরনের ব্যবহার হত আইসিসি (IC) দিয়ে তৈরি প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার আইবিএম (IBM System - 360)। তৃতীয় প্রজন্ম থেকে অর্ধ পরিবাহী স্মৃতির ব্যবহার এবং কম্পিউটারের সাথে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট উচ্চগতির লাইন প্রিন্টারসহ অন্যান্য পেরিফেরাস ডিভাইসের ব্যবহার শুরু হয়।
উদাহরণঃ
IBM 360
PDP - 8
PDP 2

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (Fourth Generation Computer)

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার গুলোকে মাইক্রোপ্রসেসের ব্যবহার করে তৈরি করা হতো। ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে আইসি এর দ্রুত উন্নয়নের ফলে LSI এবং VSLI চিপের আবির্ভাব ঘটে। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতি হলে কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ বা মাইক্রোপ্রসেসর এর সকল উপাদান একটি মাত্র চিপের মধ্যে একীভূত করা সম্ভব হয়েছে । এই চিপকে মাইক্রোপ্রসেসর বলা হয়। মূলত মাইক্রোপ্রসেসর হলো সিলিকনে তৈরি এক ধরনের VSLI চিপ। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন এর ডঃ টেড হফ এর তত্ত্বাবধানে ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করা হয়। যার নাম ইন্টেল-৪০০৪। ইন্টার-৪০০৪ ই বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বের প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর। এর ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের ছোট হয়ে যায়। দাম কমে যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়। কম্পিউটারে উন্নত মেমোরি তথা ম্যাগনেটিক বাল্ব মেমোরি ব্যবহার শুরু হয়। উইন্ডোজ ডস অপারেটিং সিস্টেম দুটির ব্যবহার শুরু করে। এ প্রজন্মের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রথম মাইক্রো কম্পিউটার তৈরি করা শুরু করে সিডি ডিভিডি প্রভৃতি এর সহযোগী যন্ত্রের ব্যাপক সম্প্রসার ঘটে ।
উদাহরণঃ
IBM 3033
IBM 4341
TRS -40
Pentium Series 

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (Fifth Generation Computer)

সাধারণত ২০০১ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে সময়ে কম্পিউটার গুলোকে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়। মূলত পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার বলতে প্রকৃত অর্থে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে বুঝায়। এ প্রজন্মের কম্পিউটার গুলো মানুষের ভাষার কথা বলা ও মানুষের কথা বুঝতে পারার সক্ষমতা রয়েছে অর্থাৎ এগুলো বুদ্ধিমান কম্পিউটার। পঞ্চম প্রজন্ম ভিএলএসআই প্রযুক্তি কে অতিক্রম করে ইউ ভি এল এস আই প্রযুক্তিতে অবস্থান করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক প্রযুক্তির চরম বিকাশ ঘটবে। কণ্ঠস্বর সনাক্তকরণ এবং বিশ্বের সকল ভাষায় কম্পিউটারের সম্প্রসারণ ঘটবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url