ডায়রিয়া রোগের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার।

ডায়রিয়া রোগের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার। ডায়রিয়া হলে যা করণীয়। ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা।


ডায়রিয়া রোগের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার
ডায়রিয়া

ডায়রিয়া কি?

ডায়রিয়া বা উদরাময় হলো এক ধরনের পরিপাক যন্ত্রের রোগ। এর ফলে শরীর থেকে অস্বাভাবিক পরিমান পানি বের হয়ে যায়। একজন ব্যক্তি যদি দিনে তিন বা তার বেশি ( স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার ) পাতলা - পানির মত মল ত্যাগ করে তাহলে তার উদরাময় বা ডায়রিয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়। কিশোর বা তার চেয়ে কম বয়সের বাচ্চাদের পুষ্টিহীনতার অন্যতম একটি কারন হলো ডায়রিয়া বা উদরাময়। পৃথিবী জুড়ে বছরে ১.৭ বিলিয়ন শিশু ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশ সহ এশিয়ার দেশ গুলোতে এই রোগে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। ভারত বর্ষে ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু ভারতে ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগে মৃতের সংখ্যা ৩০০০০০।


ডায়রিয়া বা উদরাময় আসলে একটি পানি বাহিত রোগ। এই রোগ পানি ও জলের মাধ্যেমে ছড়ায়। তবে তীব্র ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগের কারন হলো পরজীবি, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস। ব্যক্তিগত ও পরিবেশ গত স্বাস্থ্য পরিচর্যা না থাকার কারনে এই রোগ দ্রুত ছড়িযে পড়ে। ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগে শরীর থেকে ব্যপক পরিমান পানি বের হয়ে যাওয়ার কারনে রোগী খুব দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং সময় মত ব্যবস্থা না নিলে মারা যায়। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমনের একটি উপসর্গ হলো ডায়রিয়া। ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগে প্রতি বছর  প্রায় ৫০০০০০ শিশুর মৃত্যু হয়। সারা বিশ্বে শিশু মৃত্যুর দ্বিতীয় কারন হলো ডায়রিয়া। প্রতিদিন ২০০০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। 

ডায়রিয়া রোগের উপসর্গ - Symptom of  Diarrhoea

  • পেটের ব্যাথ্যা
  • পেট ফোলা 
  • পেটের পেশীর সংকোচন
  • ওজন কমে যাওয়া
  • জ্বর হওয়া
  • তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • অন্ত্র খালি করার চেষ্টা 
  • খিচুনি অনুভব করা
  • বমি বমি লাগা
  • মল পাতলা হ্ওয়া 
  • মলের সাথে প্রচুর পানি নির্গত হওয়া
  • হঠাৎ মরের বেগ আসা
  • মলের সাথে আরও কিছু উপসর্গ প্রকাশিত হতে পারে। যেমনঃ 
  • মলের সাথে রক্ত আসতে পারে
  • ঘন ঘন বমি হতে পারে
  • প্রচুর পরিমান বিয়োজন হতে পারে

ডায়রিয়া বা উদরাময়ে এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে যেগুলো প্রকাশিত হলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমনঃ

  • শরীর থেকে অনেক বেশি পরিমান পানি বের হয়ে গেলে।
  • মলদ্বার বা পেটে অনেক বেশি ব্যাথা অনুভূত হলে। 
  • মল কালো বা মলের সাথে রক্ত নির্গত হলে।
  • জ্বর হলে, এবং শরীরের তাপ মাত্রা যদি ১০২ ডিগ্রি এর বেশি হয়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির বয়ষ কম হলে এবং২৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 


ডায়রিয়ার চিকিৎসা - Treatment of  Diarrhoea

বিভিন্ন ডায়রিয়া বা উদরাময় হতে পারে। ধরণ অনুযায়ী ডায়রিয়ার চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। 


👉শিশুদের ডায়রিয়া বা উদরাময় -

বাজারে প্রচলিত ওষুধ দিয়ে শিশুদের ডায়রিয়া বা উদরাময় করা বিপদজ্জনক। বিশেষ করে শিশু বা বাচ্চার ডায়রিয়া বা উদরাময় যদি ২৪ ঘন্টার বেশি সময় স্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। 

👉তীব্র ডায়রিয়া বা উদরাময়ঃ

এক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা উদরাময় এর বিপদজ্জনক বৈশিষ্টগুলো যেমন মলের সাথে রক্ত নির্গত হওয়া, জ্বর ২৪ ঘ্ণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হ্ওয়া, ডায়রিয়া ২ বা তার বেশি দিন স্থায়ী হওয়া দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এমতবস্থায় শুধু বাজারে প্রচলিত ওষুধের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না । 
ডায়রিয়া রোগের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার
ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা 


👉স্থায়ী ভাবে ডায়রিয়া বা উদরাময় এর সমাধান - Permanent solution to diarrhea or constipation

স্থায়ী ভাবে ডায়রিয়া বা উদরাময় এর সমাধান করতে হলে শুধুমাত্র ওপরের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। এজন্য  স্থায়ীভাবে ব্যাক্টেরিয়া, পরজীবি সমাধানের প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। 

ডায়রিয়া বা উদরাময় এর কারন হিসাবে কাজ করে যেমন- ক্রোনস রোগ, ইরিটেবেল বাওয়েল সিনড্রোম ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। এসব রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। 


ডায়রিয়া বা উদরাময় সংক্রমন সম্ভাবনা হ্রাসে করণীয় - Steps to reduce the chance of infection

  • রান্নার আগে সাবান বা জীবাণু নাশক দিয়ে হাত ভাল ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • শৌচ কাজের পর সাবান দিঢে হাত ধুয়ে নিতে হবে। 
  • বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন বা এ ধরনের কাজের পর  সাবান বা জীবাণু নাশক দিয়ে হাত ভাল ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • ফোটানো বা বিশুদ্ধকৃত পানি পান করতে হবে। 
  • হালকা গরম পানি পান করা ভাল 
  • শিশু বা বয়ষ অনুযায়ী মাননিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহন করতে হবে। 
  • ছয় মাস বা তার কম বয়সের বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • খাবারের রক্ষনাবেক্ষন ঠিকঠাক হতে হবে।

যেসব বিষয় আামাদের এড়িয়ে চলা উচিত - Things we should avoid

  • স্থায়ীভাবে মজুদকৃত পানি পান করা 
  • পাস্তুরাইজ না করা দুধ পান করা 
  • কাচা খাবার খাওয়া 
  • মদ বা অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া
  • মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া 
  • ফলমূল না ধুয়ে খাওয়া 
  • কাচা বা ভালভাবে রান্না না করা খাবার খাওয়া
  • কোলা, মিছরি বা চিউইংগাম জাতীয় খাবার খাওয়া

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url