ক্যান্সার কি? || ক্যান্সার কিভাবে সৃষ্টি হয়? || ক্যান্সার রোগীর লক্ষণগুলো কি কি? ||

ক্যান্সার কি? || ক্যান্সার কিভাবে সৃষ্টি হয়? || ক্যান্সার রোগীর লক্ষণগুলো কি কি? || 

ক্যান্সার কি?
ক্যান্সার

বর্তমান পুথিবীতে যদি আমরা সবচেয়ে ভয়ানক পাচটি রোগের কথা বলি তার মধ্যে ক্যান্সার একটি।  ক্যান্সার রোগের কথা শুনলেই মনে হয় নিশ্চিত মৃত্যু।  এমনটা মনে হবার যথেষ্ট কারন আছে। আমরা যত মানুষেরই ক্যান্সার হয়েছে শুনেছি তাদের মধ্যে খুব ভাগ্যবান এবং অতি  বিত্তবান ছাড়া খুব কম মানুষই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন।

তাহলে প্রশ্ন হল- মারাত্বক মরণব্যাধি এই ক্যান্সার আসলে কি? ক্যান্সার আসলে এক ধরনের কর্কট রোগ । খুব সহজ করে বললে ক্যান্সার হচ্ছে কোষের নিয়ন্ত্রিতহীন বিভাজন বা বৃদ্ধি। ক্যান্সার কোষ গুলোকে আমরা অসামাজিক কোষ বলতে পারি কারণ এরা শরীরের অন্যান্য কোষের মতো আচরণ করে না। 

শরীরের কোষ স্বাভাবিক নিয়মে বড় হয়ে বিভাজিত হয় এবং পুরাতন কোষ নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ সব ধরনের কোষ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পর নষ্ট হয়ে যায়। 

যেমন RBC বা লোহিত রক্ত কণিকা এর আয়ু 4 মাস, WBC শ্বেত রক্ত কণিকা এর আয়ু 1 বছর,  colon cell বা কোলন কোষ এর আয়ু 4 দিন।

শুধুমাত্র স্নায়ু কোষ এসবের ব্যতিক্রম। স্নায়ু কোষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যেমন ছিল তেমনই থাকে এদের এরা বিভাজিত হয় না। কোষের বিভাজন এবং নষ্ট হয়ে যাবার প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে কোষের নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকা জেনেটিক মেটেরিয়াল(মাতৃকা) অর্থাৎ ডিএনএ থাকে, এই ডিএনএ মধ্যে থাকে জিন যা কখন কোষ বিভাজিত হবে বা কখন কোষ নষ্ট হবে এই ধরনের নির্দেশনা বহন করে। তিন ধরনের জিন কাজটি করে।

  • proto-oncogene 
  • tumor suppressor gene 
  • DNA repair gene 


এসব জীন তদের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা কাজ সম্পন্ন করে থাকে। যেমনঃ

  1. proto-oncogene এর কাজ কোষকে বিভাজিত হবার নির্দেশ দেয়। 
  2. tumor suppressor gene এর কাজ কোষের বিভাজন বন্ধের নির্দেশ দেয়।
  3. DNA repair gene এর কাজ কোষের জেনেটিক কোড অর্থাৎ সিকুয়েন্স ঠিক রাখে।

রেডিয়েশন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ
রেডিয়েশন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ

মাঝেমধ্যে বিভিন্ন উপলক্ষ যেমন কেমিক্যাল, প্রাকৃতিক বিষক্রিয়া, রেডিয়েশন ইত্যাদি কারণে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে ডিএনএ ভেঙে যায় অথবা ডিএনএ এর জেনেটিক কোড পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমনঃ কোন কারনে কোষ অসহনশীল রেডিয়েশন এর সংস্পর্শে আসলে কোষের ডিএনএ এর গঠন ভেঙ্গে যায় বা ক্ষতি গ্রস্থ হয় অথবা পরিবর্তীত হয়ে যায় । ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ কে শরীর তার নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে ঠিক করে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর হয়ে যায়। তখন কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হতে থাকে। এই ধরনের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলে সৃষ্ট কোষকে বলা হয় ক্যান্সার কোষ। নিয়ন্ত্রণহীন বিভাজিত কোষকে ক্যান্সার কোষ বলা হয়।  ক্যান্সার কোষ প্রথমেই বিভাজিত হয়ে নিজেদের সংখ্যা বাড়ায় তারপর আসে আশেপাশের সুস্থ-স্বাভাবিক কোষকে নষ্ট করে তাদের জায়গা দখল করে স্ফিত হয় বা tumor এ পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে টিউমারের রক্ত সরবরাহের জন্য রক্তনালী সৃষ্টি হয়। তখন ক্যান্সার কোষ রক্তনালীর প্রাচীর ভেদ করে রক্ত প্রবাহের সাথে মিশে গিয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে অ্যাডিশনাল টিউমার সৃষ্টি করে। এই additional tumor সাধারণত যকৃত, ফুসফুস এবং হারে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকে। ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার কোষ এক স্থানে থাকে তখন তাদের টিউমার বলে এবং যখন ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে পড়ে তখন তাদের malignant বলে।

অনেক মানুষ মনে করেন তাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি তাদের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এই ভাবনা মোটেও অমূলক নয়। কারণ আমরা এমন একটি ডিভাইস ব্রেইনের পাশেই ধরে আছি যা অনবরত রেডিয়েশন নির্গত করে যাচ্ছে।

মোবাইল ফোন কি আসলেই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে?


ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের মনে প্রায়শই তৈরি হওয়া প্রশ্নের উত্তর।


ক্যান্সার কি? 

ক্যান্সর একধরনের কর্কটরোগ যা নিয়ন্ত্রনহীন কোষ বিভাজনের কারনে তৈরি হয়। কোষের ডিএনএ এর কোন ধরনের পরিবর্তন ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারন মনে করা হয়। ক্যান্সার দেহের বৃদ্ধিকে ব্যহত করে। টিউমার এ একই ধরনের কোষ থাকে না । তবে টিউমার এ থাকা কোয়গুলো ক্যান্সার কোষ তৈরি করতে সহায়তা করে। 


ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ

ক্যান্সারগুলোর ধরনের ওপর ভিত্তি করে ক্যান্সার এর নামকরণ করা হয়। শরীরের নির্দিষ্ট কোন অংশে উৎপন্ন হয়ে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যেম লিভারে বা ফুসফুসে সৃষ্ট ক্যান্সারকে ফুসফুসীয় ক্যান্সার বলা হয়। বেশ কয়েক প্রকার ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

কার্সিনোমা ক্যান্সারঃ এটি মানুষের ত্বকে সৃষ্টি হয়। কার্সিনোমা ক্যান্সার যা ত্বকে বা টিস্যুতে শুরু হয় যা পরে অন্যান্য অঙ্গকে প্রভাবিত করে।

সারকোমা ক্যান্সারঃ কারটিলেজ, সারকোমা হাড়, কারটিলেজ, পেশী এবং রক্তনালীগুলির সংযোগকারী টিস্যুতে তৈরি হয়।

লিউকেমিয়া ক্যান্সরঃ এ ধরনের ক্যান্সার হারের মজ্জায় তৈার হয়। 

এছাড়া আরো কিছু ক্যান্সার রয়েছে-

ওভারিয়ান ক্যান্সার

লিম্ফোমা ক্যান্সার

পেট ক্যান্সার

কোলোরেটাল ক্যান্সার

ব্লাড ক্যান্সার

সার্ভিকাল ক্যান্সার

হেড এবং নেক ক্যান্সার

স্তন ক্যান্সার


ক্যান্সারের কারণ কি? -Causes of Cancer

ডিএনএ এর রূপান্তর এবং মিউটেশন ক্যান্সারের প্রধান কারণ বলে বিবেচিত। কোষের অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি ই ক্যান্সারের কারণ। তা ছাড়াও কিছু রাসায়নিকের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।  এছাড়া অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে আসলে একজন ব্যক্তির ক্যান্সার এ আক্রাস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিছু  কিছু ক্যান্সার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি এবং ডায়েটের কারণেও হতে পারে। তাছাড়া রেডিয়েশন এ কারনে ক্যান্সার হয়ে থাকে। 


ক্যান্সার কি ভাল হয়?

স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ধারনা করে থাকে ক্যান্সার রোগ ভাল হয় না। তাদের ধারনা অযৌক্তিক নয়। কারন বেশির ভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী মারা যান। এর কারন- আমাদের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রোগ নির্ণয় করা হয় অনেক পরে যখন আর ভাল চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না । আবার বেশির ভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না । তবে সময় মত ক্যান্সার সনাক্ত করা হলে ক্যান্সার রোগ নিরাময় সম্ভব। 


ক্যান্সারের লক্ষণ কী? -Symptoms of Cancer

অনেক সময় ক্যান্সার এর লক্ষন পুরোপুরি প্রকাশিত হয় না । তবে কিছু সাধারন লক্ষন দেখে ক্যান্সর এর অশঙ্কা করা যেতে পারে।

  • ক্লান্তি আনুভব করা। 
  • দুর্বলতা অনুভব করা। 
  • গিলতে অসুবিধা।  
  • ক্ষুধামান্দ্য।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য। 
  • ঘন ঘন জ্বর।
  • ত্বকের যে কোনও অংশে একটি নীল চিহ্ন।
  • ক্রমাগত কাশি।
  • ঘন ঘন সংক্রমিত হওয়া।
  • পেশী ব্যথা।
  • ত্বক গঠন।


ক্যানসার কি ছোঁয়াচে রোগ?

একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে যে সব রোগ ছড়ায় সে সব রোগগুলোই মূলত ছোঁয়াচে রোগ। অনেকে ধারনা করেন ক্যান্সার ছোঁয়াচে রোগ। বিশেষ ভাবে যৌনাঙ্গে ক্যান্সার নিয়ে অনেকের মধ্যে এেই ধারণা রয়েছে। এ জন্য অনেক সময় বিছানা, ঘর আলাদা করে দেওয়া হয়। প্রকৃত পক্ষে ক্যান্সার কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়।  এই বিষয়টি আমাদের সকলের জানা দরকার  কারণ এমন চিন্তাধারা থেকে ক্যানসার রোগীর সেবা যত্নে অনেক গাফিলতি হয়। এমনকী রোগীর চিকিৎসা পর্যন্ত হয় না।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url