অ্যাজমা কি? অ্যাজমার আধুনিক চিকিৎসা কি ? অ্যাজমার কারন, লক্ষণ, প্রতিকার আলোচনা।

অ্যাজমা রোগ কেন হয়? অ্যাজমা কিভাবে নির্ণয় করা যায়? অ্যাজমার লক্ষণ, প্রতিকার আলোচনা।

অ্যাজমা কি? অ্যাজমার আধুনিক চিকিৎসা কি ? অ্যাজমার কারন, লক্ষণ,  প্রতিকার আলোচনা।


অ্যাজমা কি? - What is asthma?

অ্যাজমা হলো শ্বাস নালীর রোগ। কোন কারনে শ্বাসনালী অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে তখন শ্বাসনালী দিয়ে বাতাস চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। ফলে রোগীর জন্য শ্বাস নিতে এবং শ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়। এধরনের সমস্যা কে অ্যাজমা রোগ বলে। 

পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অ্যাজমা বা হাপানি রোগে আক্রান্ত । আগামি ২০২৫ সালের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪০ কোটি পৌঁছবে। বাংলাদেশে হাপানি রোগীর সংখ্যা  ১ কোটি ১০ লাখ। যার মধ্যে  ৪০ লাখ ই শিশু । 

বাংলাদেশে অ্যাজরমায় আক্রান্তদের ৬৫ ভাগই অ্যালার্জি ঘটিত কারনে হয়েছে। 


অ্যাজমা কেন হয়? - What causes asthma?

অ্যাজমা প্রকৃত পক্ষে বিভিন্ন কারনে হতে পারে। তার মধ্যে প্রধানতম কারন গুলো উল্লেখ করা হল।
 

অ্যালার্জিঃ

 বংশগত কারনে যাদের অ্যালার্জি হয় তাদের  অ্যাজমা রোগ হতে পারে।

বংশগত বা জেনেটিকঃ

বংশগত ভাবে এ রোগ হতে পারে। 
যাদের বাবা-মা, দাদা-দাদী বা অন্য কোন নিকট সম্পর্কের কারো এ রোগ থাকলে অ্যাজমা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

এটপিঃ

রক্তে ইমিনোগ্লোবিউনের (IgE) এর পরিমান বেড়ে গেলে একজিমা , এলার্জি ইত্যাদি রোগের সমস্যা বেড়ে যায়। যা অ্যাজমা কে বাড়িয়ে দেয়।
 

অতিারিক্ত সংবেদনশীল শ্বাস নালীঃ

এ ধরনের শ্বাস নালী অতি মাত্রায় সংকুচিত হয় এতে শ্বাস কষ্ট হয় বা অ্যাজমা বা হাপানির পরিমান বেড়ে যায়। 

লিঙ্গঃ

সাধারণত শিশু বয়সে ছেলেদের  অ্যাজমা বেশি হয়। ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি অ্যাজমা দেখা যায়।

উত্তেজকঃ

সিগারেটের ধোঁয়া, ঠাণ্ডা বাতাস,  কারখানার উত্তেজক পদার্থ, রঙের ঝাঁজালো গন্ধ, মসলা, সুগন্ধি প্রভৃতি অ্যজমার উদ্রেক কে বাড়িয়ে দেয়। যে সব পদার্থে  অ্যালার্জি থাকে সে সব পদার্থে অ্যাজমা বেড়ে যায়। 

ওষুধঃ 

অ্যাসপিরিন, বিটা ব্লকারস, ব্যথানাশক,  হিরোইন প্রভৃতি ওষুধ অ্যাজমার ঝুকি বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা- যেমন কান্না ,অট্টহাসি,  ইত্যাদি ছাড়াও অ্যাজমার অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে।
আবার টিনজাত ফলের, ভাইরাসজনিত শ্বাসনালিতে সংক্রমণ, দৈহিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম অ্যাজমা ট্রিগার করে থাকে।

পরিবেশগত কারনঃ

ঠাণ্ডা কিংবা গরমের কারণে, ধুলোবালি বিশেষভাবে ঘরের ধুলো,  শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট হয় ।

ঋতু পরিবর্তনজনিত কারনঃ

ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট ।

তবে অ্যাজমা বা হাপানির কারন হিসেবে দুইটি বিষয়কে বিবেচনা করা হয়।
যথাঃ
  • রোগীসংশ্লিষ্ট উপাদান
  • পরিবেশগত কারন


অ্যাজমা রোগের লক্ষণ কি কি? - What are the symptoms of asthma?

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। 

  • শ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়।  

  • বুক ভার থাকে 

  • বুক চাপ লাগে। 

  • দম বন্ধ অবস্থা তৈরি হয়।  

  • ঘন ঘস কাশির উদ্রেক হয়।  

  • একটু পরিশ্রমেই শরীর হাঁপিয়ে যায়।  

  • অনেক সময় বুকে জ্যাম লাগা  

  • শুকনো কাশি হওয়া । 


 

অ্যাজমা কিভাবে নির্ণয় করা যায়? -How to diagnose asthma?

আপনার কি শ্বাসকষ্ট আছে? আপনি একটু হাঁটা চলা করলেই কি হাঁপিয়ে যান? আপনার কি কাশী আছে? বুক কি ভারি লাগে? আপনার বুকের ভিতর কি শো শো শব্ধ করে? উল্লেখিত সমস্যাগলো কোন এক বা একাধিক যদি আপনার বা আপনার পরিবারের কারো থেকে থাকে  তাহলে আপনাকে দ্রুত অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে নির্ণায়ক টেস্ট করাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার অ্যজমা বা সিওপিডি জাতীয় সিওপিডি জাতীয়রোগ হয়ে থকতে পারে। 

সাধারনত যেকোন বয়সের বাচ্চাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ হতে পারে।  তবে দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের এ রোগ হওয়া সম্ভাবনা কম। ছয় বছরের বেশি বয়স থেকে শুরু করে অ্যাজমা রোগে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। 

মাঝ বষয়ে অনেক সময় অ্যাজমা সমস্যা কমে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আবার বেড়ে যায়। প্রদাহের ফলে শ্বাস নালী চিকন হয়ে গেলে শ্বাস নালীতে শো শো শব্দ হয় । আবার সিওপিডি শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত ফুসফুসের সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের রোগ। ই্‌হা ধুমপান , ধোছা যুক্ত বায়ূর জন্য হয়। চল্লিশেএর বেশি বয়সীদের এই ধরনের সমস্যা হয়। 

হাপানি রোগীদের রোগের ইতিহাস, কারন, লক্ষণ ও শারীরিক পরীক্ষার ভিত্তিতে এ রোগ নির্ণয় করা হয় । রোগীর ফুসফুসের শক্তি, সক্ষমতা যাচাই করা হয় পিক ফ্লো মিটার বা স্পিরোমেট্রি টেস্টের মাধ্যেমে। 
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এর উপাদানের ভারসাম্য যাচাই করা বিশেষত ইয়োসিনোফিল এবং সিরাম আইজিইয়ের মাত্রা বেশি আছে কিনা দেখা হয় অ্যাজমা নির্ণয়ে ।



হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের চিকিৎসা কি? - What is the treatment of asthma?

যে সব জিনিসে অ্যালার্জি সমস্যা হয় সে সব জিনিস থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। হাঁপানি থেকে সুস্থ থাকার অন্যতম উপায় হলো অ্যালার্জি থেকে বেঁচে থাকা। 

লোমেথাসন, বুডিসনহিডি, গ্লুটিকাসন ইত্যাদি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সব সময় ব্যবহার করা । 

টারবিউটালিন, সালবিউটামল এ ধরনের ওষুধ অতি দ্রুত শ্বাসকষ্ট দূর করে। হাপানি চিকিৎসার জন্য এগুলো হল মূল ওষধ। এই ওষধগুলো শুধু মাত্র তীব্র শ্বাসকষ্ঠ বা বুকে চাপ লাগলেই ব্যবহার করতে হয়।

গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু হাঁপানির ওষুধ খাওয়া যাবে না । যেমনঃ প্রিটাম লেবার, উচ্চরক্তচাপের ওষধ,  প্রিএকলামসিয়া ইত্যাদি গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি মুক্ত করতে হলে দ্রুত হাঁপানি মুক্ত করতে হবে। 

শিশুদের হাঁপানির চি্কৎসার জন্য স্প্রে বা ইনহেলার দিতে হয়। ইনহেলার অতি দ্রুত কাজ করে।

শিশুদের অ্যাজমা চিকিৎসার জন্য এক ধরনের মাস্ক পাওয়া যায়। এ ধরনের মাস্ক দিয়েও শিশুদেরকে দ্রুত সারিয়ে তোলা যায়। 

অ্যাজমা বা হাঁপানি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারন হলো ভাইরাসের সংক্রমন। তাই হাঁপানি রোগীদের সুস্থ রাখতে হলে রোগীকে ভাই রাস সংক্রমন থেকে দূলে রাখতে হবে। 

অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের কে নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগীকে যথাসম্ভব সুস্থ রাখতে হরে। 


উপশমকারী ওষুধঃ

অন্যতম ওষুধ যেমন সালবিউটামল। এর কার্যকাল খুবই কম সময় স্থায়িত্ব লাভ করে।এই  ওষুধটি  তাত্ক্ষণিতকভাবে শ্বাসনালির ছিদ্রপথ প্রসারিত করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা কমিয়ে দেয়।

প্রতিরোধক ওষুধঃ 

অ্যামাইনোফাইলিন, স্টেরয়েড, ক্রোমগ্লাইকেট ইত্যাদি।

ইনহেলার পদ্ধতিঃ

এটি সবচেয়ে উপকারী এবং আধুনিক পদ্ধতি , দ্রুত কার্যকরী ।  এ পদ্ধতিতে ওষুধ শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসনালিতে ক্রিয়াশীল হয়। ফলে খুবই সামান্য মাত্রার ওষুধ প্রয়োগে অধিক সুবিধা পাওয়া যায়। ওষুধ রক্তে খুব একটা যায় না, যার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম থাকে। তবে রোগী অনেক সময় এটা ভূল ভাবে এর ব্যবহার করে থাকে। 


খাবার ক্যাপসুল/বড়ি/ক্সিরাপঃ

এ ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামুলকভাবে একটু বেশি থাকে।কারণ অধিক মাত্রার ওষুধ রোগীর রক্তে মিশে যায়। এই পদ্ধতিটি  অক্ষম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।


নেবুলাইজারঃ

তীব্র অ্যাজমার বা হাপানির  আক্রমণে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে নেবুলাইজার যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত না রাখলে এর মাধ্যমে অনেক সময় জীবাণু সংক্রমণ হয়।

ইনজেকশনঃ

হাঁপানি বা অ্যাজমার মারাত্মক আক্রমণে শিরায় স্টেরয়েডের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। তবে আমাদের দেশে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত হারে অ্যামাইনোফাইলিন প্রয়োগ করা হয়। এতে কখনও কখনও হ্নদযন্ত্রের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 




হাঁপানি বা অ্যাজমার প্রতিকারের উপায় - Ways to cure asthma

  • এলার্জি কারক বস্তু এড়িয়ে চলতে হবে। যেমনঃ ধুলো, ঘরের ঝুল, বালি,  ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে ।
  • ঘর বাড়িকে ধুলো বালি থেকে মুক্ত রাখাতে হবে । এজন্য দৈনিক অন্তত একবার আসবাপত্র, ঘরের মেঝ , ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে অথবা ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করা। ব্যবহার্য জিনিস পত্র জীবানু মুক্ত করতে হবে।
  • ঘরে কার্পেট না রাখাই ভাল ।
  • তোষক, বালিশ, ম্যাট্রেস এ  তুলা ব্যবহার না করে স্পঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
  •  শীতকালে যথা সম্ভব গরম পানিতে গোসল করা উচিত  ।
  • ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে ।
  • যেসব খাবারে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা পরিহার করতে হবে।
  • ঠাণ্ডা খাবার, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না ।
  • উৎকণ্ঠা, মানসিক চাপ,  দুশ্চিন্তাকে ইতিবাচক মনোভাবে গ্রহন করে চলতে হবে । সম্ভব হলে মানসিক চাপের কারণকে এড়িয়ে চলতে হবে ।
  • পেশাগত কারণে অ্যাজমা হতে পারে। পেশাগত কারনে  হলে চেষ্টা করতে হবে স্থান ত্যাগ বা পেশা পরিবর্তন করতে ।
  • পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলার কারণে শ্বাসকষ্ট বা হাপানি হলে চেষ্টা করতে হবে পরিশ্রমের কাজ কম করতে ।
  • সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে । ইতিবাচক মন মানসিকতা রোগীকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে ।
  • রেণু পরিহার করা সহ অ্যালার্জি সংক্রামক  সকাল কিংবা সন্ধ্যা বাগান এলাকায় কিংবা শস্য ক্ষেতের কাছে যাওয়া যাবে না যেন অ্যাজমার উদ্রেক না হয়।
  • রেণু এলাকা বা অ্যালারি  হয় এমন উপাদ্ন এর সংস্পর্শ থেকে বাসায় ফিরে মাথার চুল ও কাপড় ধুয়ে ফেলুন ।
  • কুকুর বিড়াল বাগান থেকে রেণু বহন করতে পারে । এজন্য নিয়মিত কুকুর বিড়ালকে গোসল করানো প্রয়োজন ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url