খাদ্যের পুষ্টিগুণ কি কমে যাচ্ছে? পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার প্রধান কারন কি কার্বন ডাই অক্যাইড?
বিজ্ঞানীদের মতে আগামি ৫০ বছরের মধ্যে খাদ্যের পুষ্টিগুন কমে যাবে ৯ থেকে ১০ শতাংশ। খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার রহস্য কি? যদি খাদ্যের পুষ্টিগুণ সত্যিই কমে যায়- তাহলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হবে মানব সমাজ? আজকের এই লেখার মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার রহস্য অনুসন্ধান করা হবে।
খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার রহস্য |
খাদ্যের পুষ্টিগুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। খাদ্যের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য একটি আবশ্যকীয় উপাদা এই অনুচ্ছেদে খাদ্যের পুষ্টিগুণ নিয়ে বেশ কিছু বিষয় জানব।
আমাদের খাদ্যের পুষ্টিগুণ কি আসলেই কমে যচ্ছে?
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খাদ্যের পুষ্টিগুণ এর উপর কতটুকু?
অনেক মানুষ দাবি করেন যে, সময়ের সাথে সাথে খাদ্যের পুষ্টির মান কমে গেছে। এই দাবি কি সত্যিই সত্য এবং আমাদের কাছে এটি নিয়ে চিন্তা করার দরকার আছে কি?উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্রথমেই আসা যাক আমাদের খাবারের পুষ্টিগুণ কি আসলেই কমে যাচ্ছে?
অনেকেই দাবি করেন খাবারের পুষ্টিগুণ সময়ের সাথে সাথে কমেছে। এই দাবি কি আসলেই সত্যি এবং আমাদেরকে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন আছে? 2004 সালে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছিল।
যেখানে 1950 থেকে 1999 পর্যন্ত বিভিন্ন 43 ধরনের ফসলের পুষ্টিগুণ কতটা পরিবর্তিত হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় তারা যা পেয়েছে তা হল,
- খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ গড়ে 6% কমেছে
- খাদ্যে ভিটামিন-সি 15% কমেছে
- খাদ্যে ভিটামিন বি2 সবচেয়ে বেশি 38% হ্রাস পেয়েছে
এবং তারা ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থের পরিমাণ হ্রাসের কথাও উল্লেখ করেছেন। এখানে খাবারের পুষ্টিগুণ যতটা কমার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কারন 2050 সালে খাবারের পুষ্টিগুণ কেমন ছিল তা জানার কোন সুযোগ নেই । কিন্তু বর্তমানে আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি তার পুষ্টিগুণ যদি সত্যি কমে থাকে তাহলে তা খুব উদ্বেগজনক। সম্প্রতি আরো অনেক গবেষণায় এই একই বিষয় স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
খাদ্যের পুষ্টিগুণ |
এখন যদি সত্যিই খাবারের পুষ্টিগুন কমে যায় , তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকে ই মাটির গুণাগুণের কথা উল্লেখ করেন। উদ্ভিদের সকল পুষ্টি উপাদান আসে মাটি থেকে , তাই মাটির গুণাগুণের কারনে খাবারের পুষ্টিগুন কমে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের কৃষকরা মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করেন , তারা মাটির গুণাগুণ রক্ষা করার জন্য সার প্রয়োগ করেন। আমাদের ফসলও বেড়ে উঠছে। তাই মাটির গুণাগুণের কারনে খাবারের পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে তা খুব বেশি যৌক্তিক নয়।
খাবারের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার সম্ভাব্য একটি কারণ হতে পারে সিলেক্টিভ ব্রীডিং।
প্রচলিত ভাষায় বললে হাইব্রিড। শুরুতে ভুট্টা একটি জংলি গাছের মত ছিল ভুট্টার দানা ছিল খুবই ছোট। কিন্তু সিলেক্টিভ রিডিং এর কল্যানে বর্তমানের ভুট্টার দানা খুবই বড় বড় এবং দৃশ্যমান। সিলেক্টিভ ব্রীডিং এর কারণে ফসল এখন আকারে বড়, রোগ বালাই মুক্ত এবং দ্রুত পরিপক্ক হচ্ছে। তাহলে কি আমরা ফসলের অন্যান্য গুনাগুন বৃদ্ধি করতে গিয়ে ফসলের পুষ্টিগুণের দিক লক্ষ্য করিনি? এটা বলাও কঠিন কারন , আজ থেকে 50 বা 100 বছর আগের ফসলের পুষ্টিগুণ যাচাই করার সুযোগ আমাদের কাছে নাই । এ ক্ষেত্রে আমাদের কে আরেকটা পন্থা অবলম্বনকরতে হবে। আমাদের কে এমন একটি ফসল বা উদ্ভিদ খুজে বের করতে হবে যার সিলেক্টেভ ব্রিডিং প্রয়োগ করা হয়নি। Goldenrod এমন একটি উদ্ভিদ । কারন Goldenrod সরাসরি মানুষের কাজে লাগে নাই তাই সিলেক্টেভ ব্রিডিং প্রয়োগ করা হয়নি। কিন্তু আমাদের কে সংগ্রহ করতে হবে আজ থেকে 50 বা 100 বছর আগের Goldenrod। কিন্তু সৌভাগ্যবশত Smithsonian Institution সাল 1850 থেকে 100-র বেশি Goldenrod ফুল তাদের সংরক্ষনে রাখত। সেখান সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে জানা গেছে আগের চেয়ে বর্তমান Goldenrod ফুলের প্রোটিন কমেছে প্রায় 30% । তাহলে বুঝা গেল সিলেক্টিভ ব্রিডিং হোক বা না হোক উদ্ভিদের পুষ্টিগুণ কমছে।
মাাটির গুণাগুণ বা সিলেক্টিভ ব্রিডিং যদি খাবারের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার কারন না হয় তাহলে কে খাবারের পুষ্টি গুনাগন কমরা জন্য দায়ী? বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2)। গত দুইশত বছরে কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2)এর পরিমান অনেক বেরে গেছে যা 200 ppm থেকে 450 ppm হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই পরিমানটা কম বলে মনে হয়ে। কিন্তু উদ্ভিদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহ্নত হলে তা পরিমান মোটেই কম নয়।
বিজ্ঞানীরা কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2) প্রভাব যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষা করেন । এর নাম হল_ FACE
FACE= Free Air CO2 Enrichment.
তারা একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কিছু উদ্ভিদের কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2) এর পরিমান বাড়িয়ে দেয়। এতে দেখা যায় যে বেশি ঘন মাত্রার কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2) যুক্ত পরিবেশের উদ্ভিদের বৃদ্ধি অনেক বেশি এবং পুষ্টির গুণাগুণ কম।
এভবে ধান, গম , ভুট্টার কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2) এর পরিমান বাড়ি দিলে দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেশি হলেও পুষ্টির গুনাগুণ কিছুটা কম হয়।
চীন এবং জাপান একটি যৌথ গবেষনায় আগামি 50 বছর পরের কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2) প্রয়োগ করে দেখান কি পরিমান পুষ্টিগুন কমে যায়_
- Protain 10%
- Iron 8%
- Zink 5% কমে যাবে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে আগামি 2050 সালে আমাদের মত পৃথিবীর অন্যান্য গরিব দেশের 150 মিলিয়ন মানুষ protein deficiency তে ভুগবে তাদের নিয়মিত খাবারের প্রোটিন লেভেল কমে যাওয়ার দরুন।protein deficiency
এখন প্রশ্ন হতে পারে , তাহলে কি আমাদের ভিটামিন এবং বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত? উত্তর হচ্ছে না, এখন আপাতত না কারণ পুষ্টিগুণ কমার পরিমাণ খুবই কম। আমরা এখনো আমাদের নিয়মিত খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছি। কিন্তু যদি কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে তখন dilution effect এর কারণে হয়তোবা স্থূলতার মহামারী আসতে পারে।
পরিশেষে আমরা জানলাম - পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্যাইড (CO2) এর পরিমান বৃদ্ধির সাথে সাথে উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান বা পুষ্টির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে।