কিভাবে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়?- How nuclear power plants use uranium to generate electricity?

পারমানবিক বিদ্যুৎ কী?
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ কি?
ইউরেনিয়ামের কাজ কি?
পারমানবিক চুল্লি কিভাবে কাজ করে? 
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কিভাবে কাজ করে?


পারমানবিক বিদ্যুৎ কী?
বর্তমান পৃথবিীকে বিদ্যুৎ ছাড়া কল্পনা করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। আমাদরে জীবনরে প্রতটি  ক্ষেত্রেই কোন না কোন ভাবে রয়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। দিনের পর দিন বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েই চলেছে । বিদ্যুতের এই চাহদিার কথা বিবেচনায় রেখে  বিজ্ঞানীরা প্রথম থকেইে চেষ্টায় ছিলেন কিভাবে অল্প খরচে পরিবেশের কম ক্ষতি করে বেশি পরিমান উৎপাদন করা যায় এরই ফলশ্রুতিতে  সামনে আসে পারমাণবকি বিদ্যুতের কথা। যেখানে কয়লার মাধ্যমে ১ ইউনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হয় ৮২০ গ্রাম সেখানেপারমাণবকি বিদ্যুৎ বিদ্যুতের হয় মাত্র ১২ গ্রাম।

পারমাণবকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে অল্প খরচে কেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সেটাই জানার চেষ্টা করব-
পৃথবিীর মোট উৎপাদতি বিদ্যুতের বড় একটি অংশ আসে তাপবিদ্যুৎকন্দ্রে থেকে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তাপশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এবং এই তাপশক্তি পাবার জন্য আমাদরে পরচিতি জ্বালানি যেমনঃ তেল,গ্যাস,কয়লা ব্যবহার করা হয় । অন্যদকিকে পারমাণবকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তাপশক্তি পাবার জন্য ব্যবহার হয় ২৩৫ ভর সংখ্যা বিশিষ্ট ইউরেনিয়াম র্অথাৎ ইউরেনিয়াম  ২৩৫ আইসোটোপ। ইউরেনিয়াম  এর বিশেষত্ব হচ্ছে ইউরেনিয়াম  পরমাণুকে যদি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করা হয় তখন ইউরেনিয়াম  পরমাণুর ভরসংখ্যা ২৩৫ থেকে ২৩৬ এ রূপান্তরতি হয় যার ফলে ইউরেনিয়াম পরমাণু অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। অস্থিতিশীল ইউরেনিয়াম  পরমাণুতে তখন চার ধরনরে পরর্বিতন ঘটে। প্রথমত, ইউরেনিয়াম  পরমাণুটি  ভেংগে গিয়ে সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন মৌল কৃপ্টন এবং বেরিয়াম এ রূপান্তরিত হয়। দ্বিতীয়ত, তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়। তৃতীয়ত, তাপশক্তি নির্গত হয় যার পরিমান ২০০ ডিগ্রি এবং র্সবশষে আরো তিনটি নিউট্রন নির্গত হয় নতুন করে নির্গত হওয়া এই তিনটি নিউট্রন তার আশপোশে থাকা আরও তিনটি ইউরেনিয়াম  পরমাণুকে আঘাত করে ফলে, একটি চেইন রিঅ্যাকশন এর সূচনা হয়, যাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া। এইভাবে প্রতিটি পরমাণু ভাঙ্গার সাথে সাথে প্রাপ্ত ২০০ ডিগ্রি তাপশক্তিই মূলত প্রয়োজন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। 

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কিভাবে কাজ করে?
এটি হচ্ছে ইউরেনিয়াম  বান্ডেল,পারমাণবকি বিদ্যুৎকেন্দ্রের  জ্বালানী। এই জ্বালানী পোড়ানোর মাধ্যমেই প্রাপ্ত তাপ শক্তির মাধ্যমে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।  খনি থেকে ইউরেনিয়াম  আকরিক উত্তোলনের পর রেশ কিছু জটিল রাসায়নকি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুবই সতর্কভাবে বিশেষ ভাবে ইউরেনিয়াম  বান্ডলে প্রস্তুত করা হয়। ডায়াগ্রামটি লক্ষ্য করুন,
এটি পারমাণবকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক  চিত্র।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মূলত চারটি অংশে বিভক্ত থাকে রিয়েক্টর, স্টীম জেনারেটর, ইলকট্রনিক জেনারেটর এবং কুলিঙ্ক টাওয়ার। রিয়াক্টরের ভেতরের ইউরেনিয়াম  বান্ডেল বসানো হয় এবং ইউরেনিয়াম  বান্ডেলের ফাঁকে ফাঁকে বসানো হয় কন্ট্রোল রড যা তৈরি করা হয় বোরন, ক্যাডমিয়াম, সিলভার অথবা ইন্ডিয়াম দ্বারা। কন্ট্রোল রড এর কাজ হচ্ছে রিয়াক্টরের ভেতর নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া  শুরু হলে সেটাকে নিয়ন্ত্রন করা। কন্ট্রোল রড এই কাজটি করে নিউট্রন শোষণ এর মাধ্যমে। এজন্য কন্ট্রোল রডকে এমন ভাবে বসানো হয় যেন প্রয়োজনমতো রিঅ্যাক্টরে প্রবেশ  অথবা বের করা যায়। রিয়াক্টরের ইউরেনিয়াম  বান্ডলে এবং কন্ট্রোল রড বসানোর পর সর্ম্পূণ রিয়াক্টর পানি দ্বারা র্পূণ করা হয়। রিঅ্যাক্টরের চারপাশে এক মিটার পুরু কংক্রিটের প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে রিঅ্যাক্টরের ভিতরের তেজস্ক্রিয়তা বাইরে বের হয়ে আসতে না পারে। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তিন ধরনের রশ্নি নির্গত হয়- আলফা, বিটা, গামা রশ্নি। 

রিঅ্যাক্টরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু হলে ইউরেনিয়াম রডগুলো উত্তপ্ত হতে শুরু করে ফলে রিঅ্যাক্টরে থাকা পানিও উত্তপ্ত হতে থাকে। এই পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। পানির তাপমাত্রা ৫৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা প্রায় ৩০০ ডিগী সেলসিয়াস হয়ে পর্যন্ত হয়। উৎপন্ন তাপ পাঠানো হয় স্টীম জেনারেটরে । এই তাপ স্টীম জেনারেটরে থাকা পানিকে উত্তপ্ত করে এবং পানিকে বাষ্পে পরিনত করে। ক্রমাগত তাপ বাড়তে থাকে , একই সাথে বাষ্পের পরিমান বাড়তে থাকে । বাষ্পের চাপ বেড়ে গেলে বাষ্পের এই উচ্চাপ  একটি টারবাইন যুক্ত প্রকোষ্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। টারবাইনটিকে যুক্ত করা থাকে জেনারেটরের সাথে। উচ্চ চাপে টারবাইন ঘুরতে থাকে , সেই সাথে জেনারেটরের কয়েল ঘুরতে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে থাকে।

এদিকে উচ্চ তাপে উত্তপ্ত বাষ্প টারবাইন ঘুরিয়ে প্রবেশ করে কুলিং টাওয়ারে। কুলিং টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ২০০ মিটারের বেশি। কুলিং টাওয়ারে উত্তপ্ত বাষ্প ঠান্ডা হয়। বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পুনরায় তরলে পরিনত হয়। তরল পানি পাষ্প করে আবার স্টিম জেনারেটরে প্রবেশ করানো হয় যা পর্যায়ক্রমে বাষ্প , বাষ্প থেকে টারবাইনকে ঘুরিয়ে কুলিং টাওয়ারে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়া বার বার চলতে থাকে এবং পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে থাকবে। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অতি অল্প পরিমান ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে প্রচুর পরিমান বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক গ্রাম ইউরেনিয়াম যে পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় , সেই পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ২২৭০ লিটার পরিমান জালানি তেলের প্রয়োজন। 



সাধারনত পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউরেনিয়াম এর রড গুলোকে তিন থেকে চার বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন করতে হয়। তিন থেকে চার বছর পর ইউরেনিয়াম রডগুলো আপেক্ষিক ভাবে একই অবস্থায় থেকে যায়। এমতঅবস্থায় ইউরেনিয়াম রড গুলো উত্তপ্ত হওয়া বন্ধ হয়ে যায় না । এই রডগুলো আরও শতকোটি বছর যাবৎ উত্তপ্ত হতেই থাকবে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url